গল্প: ‘ডাবল সারপ্রাইজ’

রিকশাওয়ালা প্যাডেল মেরে চলছে। মার্কেটের দিকে। পাশে বউ। এটা আমার বউ। আমার বিয়ে করা বউ।

আজ আকাশে কোন চাঁদ নেই। দিনের বেলায় চাঁদ থাকে না। সূর্যের খরতাপে রিক্সায় হুড তোলা। আমি খুব উত্তেজনায় আছি। বউ আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে। আমার ৩১তম জন্মদিনের সারপ্রাইজ।
একদিন হঠাৎ কাছে এসে বলে তোমার জন্মদিনে আমি তোমাকে একটা গিফট দিতে চাই।

-বাহ! বাহ! সে তো ভালো কথা! তো টাকা পাবা কই?

-কেন? প্রতিদিন তোমার শার্ট-প্যান্ট কে ধুই? ওইটাই তো আমার সোর্স অব ইনকাম।

বাহ! বাহ! তো তাহলে একটা ভালো দিনক্ষণ দেখে যাওয়া যাক। স্বামীদের কাছে এ এক আচার্য ব্যাপার। বউ গিফট করবে।

রিকশা থেকে নেমে ‘ও’ সোজা চললো লিফটের ছয়ে।

আমি বললাম কি করছো? ছেলেদের কেনাকাটা লিফটের দুইয়ে।

আরে আস্তে আস্তে উপর থেকে নিচের দিকে নামবো আরকি!

প্রথমেই এক দোকানে ডুকে এটা ওটা দেখতে লাগলো।

এটা কেমন দেখো? দু’হাতে ঘষে ঘষে রং দেখছে। দেখো দেখো এটার রং কেমন পাকা। একদম বড় আপার শাড়ির মত!

ভাই এটার দাম কত? এই শোন না, আমার কিছু টাকা ধার দাও না। আগামী মাসে শোধ করে দিবো।

-শোধ? কিভাবে?

-কেন আমি কি আর তোমার জামা কাপড় ধুবো না নাকি?

অনেক ঘুরাঘুরির পর পিজ্জা আর বার্গার খেয়ে ঢুকল এক জুয়েলারির দোকানে।

তারপর লাল চুড়ি, নীল চুড়ি আরও কত কি! এবার সরাসরি বলেই ফেললো নিয়ে দাও।

আমি বললাম, কিভাবে?

সে জবাবে বললো, কেন আগেরটা আমার ধারের টাকা থেকে নিয়েছি। আবার যে টাকা আছে সে টাকা দিয়ে তোমাকে গিফট দিতে হবে। তুমি কি চাও না, তোমাকে গিফট দি?

-বড়ই চিন্তার বিষয়! আচ্ছা নাও নাও।

তারপর শেষ পর্যন্ত তিন-চারটে দোকানে ঘুরিয়ে। আট-দশটা শার্ট ট্রায়াল দেয়ায়ে আমার জন্য একটা পছন্দ করলো।

তোমাকে শার্টটি অনেক মানাবে। বেশ ভালো দেখাচ্ছে। আগামী মাসে আমার বান্ধবীর বিয়েতে তুমি আমার গিফট দেয়া শার্ট পড়ে যাবা।
তারপর কাউন্টারে টাকা দিতে যাবে। টাকা খুঁজছে। খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। মেয়েদের টাকা থাকে বড় ভ্যানিটি ব্যাগে। তার ভিতর ছোট একটি পার্স। তার মধ্যে চেইন ওয়ালা লুকায়িত আরেকটি পকেটে ভাঁজ করা।

দোকানদার বললো, ম্যাডাম এনি-প্রবলেম। সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, টাকা তো এই পকেটেই রেখেছিলাম! ওর এ অবস্থা দেখে আমি বললাম, নো-প্রবলেম আমি কি দিয়ে দিবো?

আচ্ছা! দাও আমি বের হয়েই তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।

কথাটা এতই স্মার্টলি বললো, মনে হচ্ছে বের হয়েই এটিএম থেকে টাকা তুলে তারপর দিবে। আরে তার এটিএম তো আমি!

আসার সময়। সে কোন দিক তাকাচ্ছে না। কথা বার্তা তেমন একটা বলছে না। কিছুটা চুপচাপ।

-শুনো টাকাগুলো আমি সত্যি সত্যিই পাচ্ছি না।

-আমি জানি।

-আসলে বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই ব্যাগ চেক করে বের হওয়ার দরকার ছিলো।

-এটা ঠিক। সব সময় এই সর্তকতা অবলম্বন করবে।

-তুমি ধরে নাও, আমার কাছে টাকা ছিলো। এবং এই শার্ট আমিই তোমাকে গিফট করছি।

-হুম। আমি অনেক আগেই এটা ধরে নিয়েছি।

-তুমি আমার সাথে এখন মজা নিচ্ছো। তাই না?

-রাগ করো না। তোমার টাকা হারানোর তদন্তের ভার আমি নিচ্ছি। এখন বলো তোমার কি পাঁচ’শ টাকার নোট দুইটি ছিলো?

-হুম।

-আর এক’শ টাকার নোট চয়টি।

-হুম।

-এরপর কিছু পঞ্চাশ, বিশ টাকার ভাংতি নোট।

-হুম। ছিলো ছিলো….। কিন্তু…? তাহলে তো আমার টাকা হারায়নি। চুরি হয়েছে! শয়তান! আমার টাকা তাহলে তুমি নিছো। আমার টাকা দিয়েই আমারে এসব কিনে দিছো।

বলতে বলতেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। অভিমানি মেঘ জমে বিজলী চমকাচ্ছে। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। আমি তার হাত শক্ত করে ধরলাম। সেও ভালোবাসার আত্মাভিমানের রাগে দাঁতে কড়কড় করছে।
রিকশা চলছে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে। ভিলেন চেষ্টা করছে নায়িকার মুখে হাসি ফুটাতে!

লেখাটি www.ppbd.news অনলাইন পত্রিকায় ২৬ নভেম্বর ২০২০ এ প্রকাশিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Post

শুভ জন্মদিন ২০২২

আজ আমার তেত্রিশ মতান্তরে পঁয়ত্রিশতম শুভ জন্মদিন! (বয়সে করোনাকালিন হিসেব বাদ দেয়া হয়েছে) ছবিটি আনুমানিক ২০ বছর আগের হারিকেন জমানার। ছত্রিশ ফিল্মের কোডাক ক্যামেরার। মেঘে মেঘে বয়স তো আর কম হলো না। সেই ১৫ টাকা সের চাল সময়কার ছেলে আমি। ৪০ টাকা নিয়ে বাজারে যেতাম। এর মধ্যে মাছ-তরকারি, মুদি সদায় সহ দুই টাকা বাঁচিয়ে .....

বই: প্রোডাক্টিভ মুসলিম

বইটি পড়ে কিছু ব্যাপারে আচার্য হয়েছি। বইটি হাতে নিয়ে পড়ার আগে মনে করেছিলাম, এর ভিতরে লেখা থাকবে শুধু কাজ আর কাজ। কিসের ঘুম, কিসের বিশ্রাম আর কিসের অবসর। হয়তো বলা থাকবে, এই দুনিয়াতে কি শুধু ঘুমাতে আসছেন। শুধু কাজ করেন আর অন্য কিছু নয়। পরবর্তীতে ঘুমের উপর চ্যাপ্টার পড়ে আরও বেশি আচার্য হয়েছি যে, .....

বই: ইন দ্য হ্যান্ড অব তা-লে-বা-ন

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১। মঙ্গলবার। নিউইয়র্ক-বাসীর সকালটা শুরু হয় অন্যান্য দিনের মত! সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা নিউইয়র্কের লোকজন খুব সকালে উঠে যার যার অফিস শুরু করেছে। প্রতিদিনকার সকালের মত হয়তো কেউ কেউ চা-কপি দিয়ে মাত্র অফিস ডেক্সে ওইদিনের মত নিজেকে সেট করে নিচ্ছে। পৃথিবীকে নাড়া দিতে যাচ্ছে এমন কোন ঘটনা ঘটতে চলেছে তখনও এই .....

বই: ফজর আর করব না কাজা!

আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম! মাত্র ফজরের আজান হয়েছে। সামনের বাসার আঙ্কেলের বড় গেটের তালা খোলার খটখট আওয়াজ। তারপর আমার মোবাইলের এক নাম্বার এলার্ম ভেজে উঠলো। একরাশ বিরক্তিসহ এলার্ম বন্ধ করলাম। এই আলতো ঘুমের এমন ঝনঝন তালা খোলার শব্দ আর এলার্মের এমন ভিট-ঘুটে আওয়াজ সত্যিই বিরক্তিকর ছিলো। তারপর কোন রকম উঠে দায়সারা ভাবে নামাজ ঘরে .....

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ রিভিউ: এ আমি কি দেখলাম?

অফিস থেকে মনে হয় একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়েছি। আজকে বাংলাদেশের চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা। কয়দিন আগেও এই অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুরের মাঠে আমরা কচুকাটা করেছি। সেই হিসেব মতে আজ একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করবো। টানটান উত্তেজনা থাকবে। বাংলাদেশ হাড় কাঁপানো ব্যাটিং করবে। মাঠ কাঁপানো ফিল্ডিং করবে। টানটান করে বাউন্ডারি হাঁকাবে। দর্শক সাড়ি থেকে বাংলাদেশ! .....

নাফাখুম জলপ্রপাত – নেটওয়ার্কের বাইরে একদিন

আজকে যাবো। কালকে যাবো। এই বর্ষায় যাবো। এমন করতে করতে এক ট্যুরের প্ল্যান চলে প্রায় দুই বছর ধরে। এর মধ্যে করোনা। লকডাউন। শাটডাউন। মাস্ক। স্যানিটাইজার ইত্যাদি ইত্যাদি পৃথিবীতে নতুন করে আগমন করেছে। অন্যদিকে নাই হয়ে গেছে অনেক পরিচিত মানুষ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-অনাত্মীয়। প্রতি বছর একটা জংলী ট্যুর দেয়ার ইচ্ছে থাকে। বড়সড় একটু গ্রুপ করে কোন .....

All Post